Appendicitis (এপেন্ডিসাইটিস) : সাধারণত নাভীর নীচে ডানপাশে তলপেটের তীব্র ব্যথাকে এপেন্ডিসাইটিস বলা হয়। এই পজিশনে এপেন্ডিক্স (Appendix) নামে একটি কেঁচোর মতো একটি অংশ আছে ; ইহাতে ইনফেকশন / প্রদাহ হওয়াকেই এপেন্ডিসাইটিস বলা হয়। ইহার প্রধান লক্ষণ হলো প্রথমে ব্যথা (তলপেটের ডানপাশে), তারপরে হয় বমি এবং শেষে হয় জ্বর। সমস্ত পেটই এতো সেনসেটিভ হয় যে, হালকাভাবে স্পর্শ করলেও রোগী ব্যথা পায়। এপেন্ডিসাইটিসের একটি প্রধান লক্ষণ হলো, রোগীর পেটে জোরে চাপ দিয়ে হঠাৎ চাপ ছেড়ে দিলে (Rebound tenderness) রোগী প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করে থাকে। সে যাক, এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা ৯৯% ভাগ ক্ষেত্রেই অপারেশান ছাড়া এপেন্ডিসাইটিস সারাতে পারে না কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে ১০০% ভাগ কেইস-ই বিনা অপারেশানে সারানো যায়।
Bryonia alba : এপেন্ডিসাইটিসের সবচেয়ে ভালো ঔষধ হলো ব্রায়োনিয়া।
কেননা -চাপ ছেড়ে দিলে ব্যথা হয়- এই অদ্ভূত লক্ষণটি ব্রায়োনিয়ায়
আছে। সাধারণত ৫০,০০০ (বা 50M), ১০০,০০০ (বা CM) ইত্যাদি উচ্চ
শক্তিতে এক মাত্রা খাওয়ানোই যথেষ্ট ; কিন্তু নিম্ন শক্তিতে খেলে
রোজ কয়েকবার করে কয়েকদিন খাওয়ানো লাগতে পারে।
Iris tenax : ইরিস টেনক্সকে বলা হয় হোমিওপ্যাথিতে এপেন্ডিসাইটিসের একেবারে স্পেসিফিক ঔষধ। কেননা ইহা যত মানুষের শরীরে পরীক্ষা করা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকেরই তলপেটের ডানপাশে তীব্র ব্যথার লক্ষণ পাওয়া গেছে।
* ব্যাপারটি এমন নয় যে, আপনি কেবল ব্রায়োনিয়া আর ইরিস টেনক্স নিয়ে পড়ে থাকবেন। এই দুটি ছাড়াও যদি অন্য কোন ঔষধের লক্ষণ রোগীর মধ্যে পাওয়া যায়, তবে সেটি প্রয়োগেও এপেন্ডিসাইটিস অবশ্যই আরোগ্য হবে। তবে কথা হলো ব্রায়োনিয়া এবং ইরিস টেনক্স ঔষধ দুটির কথা প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে।
Appetite disorder (ক্ষুধার সমস্যা) : ক্ষুধার সমস্যা দুই ধরণের হতে পারে। ক্ষুধা একেবারে কম হওয়া যেমন একটি রোগ তেমনি ক্ষুধা খুব বেশী হওয়াটাও রোগের মধ্যে পড়ে।
Iodium : আয়োডিয়াম ঔষধটি রাক্ষসের মতো ক্ষুধা তৈরী করতে পারে। আয়োডিয়ামের লক্ষণ হলো প্রচুর খায় কিন্তুতারপরও দিনদিন শুকিয়ে যেতে থাকে এবং গরম সহ্য করতে পারে না। যাদের ক্ষুধা খুব বেশী তারা এটি খেলে ক্ষুধা কমে আসবে। অন্যদিকে যাদের ক্ষুধা খুবই কম তারা খেলে ক্ষুধা বেড়ে যাবে। খেতে হবে নিম্নশক্তিতে (Q,৩, ৬) পাঁচ ফোটা করে রোজ তিনবার।
Alfalfa : আলফালফা ঔষধটি নিয়মিত অনেকদিন খেলে ক্ষুধা, ঘুম, ওজন, হজমশক্তি ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়। নিম্নশক্তিতে (Q) দশ ফোটা করে রোজ তিনবার করে খেতে পারেন। দ্রুত ওজন বাড়াতে চাইলে সর্বোচ্চ পঞ্চাশ-ষাট ফোটা করে খেতে পারেন। তবে কোন সমস্যা হলে কমিয়ে খাওয়া উচিত। ইহার স্বাদ যেহেতু খারাপ সেহেতু শিশুদেরকে চিনি বা গুড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।
Nux vomica : নাক্স ভমিকা ঔষধটি ক্ষুধা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী ঔষধ। যারা পরিশ্রমের কাজ কম করে কিন্তুটেনশন বেশী করে, দিনের বেশীর ভাগ সময় চেয়ারে বসে থাকে, সারা বছরই পেটের গন্ডগোল লেগেই থাকে, শীত সহ্য করতে পারে না.....এই ধরণের লোকদের ক্ষেত্রে নাক্স ভমিকা ভালো কাজ করে।
Calcarea carbonica : ক্যালকেরিয়া কার্ব নামক ঔষধটি হলো হোমিওপ্যাথিতে সবচেয়ে ভালো ভিটামিন। এটি ক্ষুধাহীনতা, অজীর্ণ, বদহজম, পেটের আলসার, ঘনঘন অসুখ-বিসুখ হওয়া, শারীরিক দুর্বলতা, স্মায়বিক দুর্বলতা, ব্রেনের দুর্বলতা, অপুষ্টি ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে পারে।
Anaemia (রক্তশূণ্যতা) :- রক্তশূণ্যতা মানে শরীরে রক্ত না থাকা নয় বরং রক্ত প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকা। পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া, ঋতুস্রাবের সাথে বেশী রক্ত যাওয়া, গর্ভধারণ, কোন মারাত্মক দুর্ঘটনা বা অসুখে রক্ত নষ্ট হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি কারণে শরীরে রক্তের পরিমাণ কমে যেতে পারে। শরীরে রক্তশূণ্যতা দেখা দিলে চেহারা মলিন-ফ্যাকাসে হয়, দুর্বলতা, ক্লান্তি, বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, ঘনঘন শ্বাস নেওয়া, জন্ডিস, হাত-পায়ে অবশ অবশ ভাব এবং সুই ফোটানো ব্যথা,মাথা ঘুরানি, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিয়ে থাকে। রক্তশূণ্যতার চিকিৎসায় ঔষধ খেতে হবে নিম্নশক্তিতে (Q,৩, ৬, ৩০) রোজ তিনবার করে অনেক দিন। ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি দুধ, ডিম, লাল গোশত, ফল-মুল, শাক-সবজি ইত্যাদি পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে।
Ferrum metallicum : ফেরাম মেট হোমিওপ্যাথিতে রক্তশূণ্যতার এক নম্বর ঔষধ। ইহার লক্ষণ হলো সাধারণভাবে মুখের রঙ থাকে ফ্যাকাসে-সাদাটে কিন্তুএকটু আবেগপ্রবন হলেই মুখের রঙ লাল হয়ে যায়। তাছাড়া হাত-পা-মুখে ফোলা ফোলা ভাব থাকে এবং অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ খাওয়ার পরে বমি করে দেয়। ইহারা সর্বদা শীতে কাঁপতে থাকে এবং সন্ধ্যার দিকে জ্বরে ভোগে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে Ferrum phosphoricum নামক ঔষধটি ফেরাম মেটের চাইতে ভালো কাজ করে থাকে। সুসলারের মতে, প্রথমে খেতে হবে Calcarea phosphorica এবং পরে খাওয়া উচিত Ferrum phosphoricum নামক ঔষধটি।
Lecithinum : ডিমের কুসুম থেকে তৈরী লিসিথিন নামক হোমিও ঔষধটি রক্তশূণ্যতার একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ। বিশেষত যাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের (Haemoglobin) মাত্রা কম থাকে। অনেক চিকিৎসা বিজ্ঞানীর মতে, এটি ব্লাড ক্যান্সার, থেলাসেমিয়া ইত্যাদি মারাত্মক রোগে দারুণ কাজ করে থাকে।
Pulsatilla pratensis : অতিরিক্ত আয়রন জাতীয় ঔষধ খাওয়ার কারণে রক্তশূণ্যতার সৃষ্টি হলে পালসেটিলা প্রযোজ্য। যে-সব মেয়েরা কথায় কথায় কেঁদে ফেলে, মুক্ত বাতাস পছন্দ, পিপাসা কম, গ্যাসট্রিক আলসার এবং মাসিকের গন্ডগোল সারা বছরই লেগে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে পালসেটিলা উপকারী।
Cinchona / China officinalis : শরীর থেকে প্রয়োজনীয় তরল পদার্থ বের হয়ে যাওয়ার কারণে রক্তশূণ্যতা দেখা দিলে চায়না খাওয়াতে হবে। যেমন কোন ভাবে শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়া, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো, দীর্ঘদিনের ডায়েরিয়া, মাত্রাতিরিক্ত যৌনকর্ম বা বীযর্পাত, মাসিকের সময় বেশী রক্তপাত ইত্যাদি ইত্যাদি। চায়নার লক্ষণ হলো মাথা ভারী ভারী লাগে, চোখের পাওয়ার কমে যায়, অল্পতেই বেহুঁশ হয়ে পড়া, কানের ভেতরে ভো ভো শব্দ হওয়া, হজমশক্তি কমে যাওয়া, পেটে প্রচুর গ্যাস হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
Chininum arsenicosum : চিনিনাম আর্স ঔষধটিও রক্তশূণ্যতা নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে বিশেষত যেখানে দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, অতিরিক্ত ঘামানো ইত্যাদি লক্ষণ বেশী থাকে। পারনিসিয়াস এনিমিয়া (pernicious anaemia) নামক বুড়ো লোকদের মারাত্মক রক্তশূণ্যতাতেও এটি মাঝে মাঝে বেশ উপকার করে থাকে।
Alfalfa : আলফালফা নামক ঔষধটি রক্তশূণ্যতায় খেতে পারেন। এটি ক্ষুধা বৃদ্ধি করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে। অপুষ্টিজনিত রক্তশূণ্যতায় একটি উৎকৃষ্ট ভিটামিন হিসাবে এটি সবাই ইচ্ছে করলে সারা জীবন খেতে পারেন। কেননা ইহার কোন ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নাই।
Aceticum Acidum : এসিটিক এসিডের রক্তশূণ্যতার লক্ষণ হলো মুখের বা ত্বকের রঙ হয় মোমের মতো চকচকে এবং প্রচুর পানি পিপাসা থাকে।
Calcarea carbonica : শিশু-কিশোর-তরুণ-যুবক-বৃদ্ধ যে-কোন বয়সের লোকদের রক্তশূণ্যতা নিরাময়ের ক্ষেত্রে ক্যালকেরিয়া কার্ব একটি দারুণ ঔষধ। শতকরা পঞ্চাশ ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে এটি আশাতীত উপকার করে থাকে। ক্যালকেরিয়া কার্বের লক্ষণ হলো এরা খুব সহজে মোটা হয়ে যায়, শরীরের চাইতে পেট মোটা থাকে, থলথলে নরম শরীর, প্রস্রাব-পায়খানা-ঘাম সব কিছু থেকে টক গন্ধ আসে, হাতের তালু মেয়েদের হাতের মতো নরম (মনে হবে হাতে কোন হাড়ই নেই), মাথা ঘামায় বেশী, মুখমন্ডল ফোলাফোলা ইত্যাদি ইত্যাদি।
Nux vomica : দীর্ঘস্থায়ী পেটের সমস্যার (বদহজম) কারণে রক্তশূণ্যতা দেখা দিলে নাক্স ভমিকা প্রযোজ্য।
Plumbum metallicum : রক্তশূণ্যতার সাথে যদি দীর্ঘ দিনের কোষ্টকাঠিন্য/শক্ত পায়খানার সমস্যা থাকে, তবে প্রথমেই প্লামবাম ঔষধটি খাওয়ার কথা চিন্তা করতে হবে। এতে এমন পেট ব্যথা থাকে, যাতে মনে হবে পেটের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে কেউ যেন সুতো দিয়ে বেঁধে পিঠের দিকে টানতেছে।
Arsenicum Album : ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড ইত্যাদি মারাত্মক রোগে ভোগার কারণে প্রচুর রক্ত নষ্ট হয়ে রক্তশূণ্যতার সৃষ্টি হলে তাতে আর্সেনিক প্রযোজ্য। আর্সেনিকের লক্ষণ হলো মারাত্মক দুর্বলতা, হাত-পায়ে পানি নামা, খুব দ্রুত শুকিয়ে যাওয়া (emaciation), বুক ধড়ফড়ানি, টক খাওয়ার আগ্রহ বেড়ে যাওয়া, পিপাসা বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি।
Picricum Acidum : রক্তশূণ্যতায় পিক্রিক এসিডের লক্ষণ হলো ভীষণ দুর্বলতা, সারা শরীরে ক্লান্তি এবং ভার ভার অনুভুত হওয়া, মেরুদন্ডের বরাবরে জ্বালাপোড়া ধরণের ব্যথা, উত্তেজিত হলে সকল কষ্ট বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি।
Helonias dioica : হেলোনিয়াস রক্তশূণ্যতা নিরাময়ে একটি ভালো ঔষধ বিশেষত সে-সব মহিলাদের জন্য যারা জরায়ু সংক্রান্ত রোগে ভোগছেন, যারা অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে কঙ্কালে পরিণত হয়েছেন। ইহার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো রোগের কথা ভাবলে রোগ বেড়ে যায় এবং রোগের কথা ভুলে থাকলে ভালো থাকে।
Aletris farinosa : এটিও মহিলাদের রক্তশূণ্যতার একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ বিশেষত উঠতি বয়সী মেয়েদের এবং গর্ভবতীদের। তাছাড়া সে-সব মহিলারা জরায়ু সংক্রান্ত কোন রোগে ভোগছেন, তাদের রক্তশূণ্যতায়ও এটি একটি ভালো ঔষধ।
Natrum muriaticum : নেট্রাম মিউর রক্তশূণ্যতার একটি ভালো ঔষধ। রোগীর চেহারা থাকে ফ্যাকাসে, ভালো খাওয়া-দাওয়া করে কিন্তুদিনদিন শুকিয়ে কঙ্কালে পরিণত হয়, ঘনঘন মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হয়, পায়খানা অধিকাংশ সময় শক্ত থাকে, মাসিকের রক্তক্ষরণ হয় খুবই অল্প, বুক ধড়ফড়ানি, মাঝে মাঝে হার্টবিট মিস হয়, মেজাজ হয় খিটখিটে, শুচিবায়ু গ্রস্ত স্বভাব।
Kali carbonicum : ক্যালি কার্বের প্রধান লক্ষণ হলো দুর্বলতা, বেশী বেশী ঘামানো এবং কোমর ব্যথা। এছাড়া চোখের ওপরের পাতা ফোলা থাকে, ঘুমের মধ্যে পায়ে টাচ করলে চমকে ওঠে, যৌনমিলনের পরে চোখে সমস্যা হয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
Kali phosphoricum : ক্যালি ফস রক্তশূণ্যতা এবং দুর্বলতার একটি অন্যতম শ্রেষ্ট ঔষধ। ইহার রোগীরা অত্যন্ত সেনসিটিভ এবং বদমেজাজী হয়ে থাকে। মাত্রাতিরিক্ত শারীরিক বা মানসিক পরিশ্রমের কারণে কঙ্কালে পরিণত হয়েছেন। তাছাড়া হঠাৎ স্পর্শ করলে চমকে ওঠে, যৌনমিলনের পরে দুর্বল হয়ে পড়ে ইত্যাদি লক্ষণও থাকে।
Bashir Mahmud Ellias
Iris tenax : ইরিস টেনক্সকে বলা হয় হোমিওপ্যাথিতে এপেন্ডিসাইটিসের একেবারে স্পেসিফিক ঔষধ। কেননা ইহা যত মানুষের শরীরে পরীক্ষা করা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকেরই তলপেটের ডানপাশে তীব্র ব্যথার লক্ষণ পাওয়া গেছে।
* ব্যাপারটি এমন নয় যে, আপনি কেবল ব্রায়োনিয়া আর ইরিস টেনক্স নিয়ে পড়ে থাকবেন। এই দুটি ছাড়াও যদি অন্য কোন ঔষধের লক্ষণ রোগীর মধ্যে পাওয়া যায়, তবে সেটি প্রয়োগেও এপেন্ডিসাইটিস অবশ্যই আরোগ্য হবে। তবে কথা হলো ব্রায়োনিয়া এবং ইরিস টেনক্স ঔষধ দুটির কথা প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে।
Appetite disorder (ক্ষুধার সমস্যা) : ক্ষুধার সমস্যা দুই ধরণের হতে পারে। ক্ষুধা একেবারে কম হওয়া যেমন একটি রোগ তেমনি ক্ষুধা খুব বেশী হওয়াটাও রোগের মধ্যে পড়ে।
Iodium : আয়োডিয়াম ঔষধটি রাক্ষসের মতো ক্ষুধা তৈরী করতে পারে। আয়োডিয়ামের লক্ষণ হলো প্রচুর খায় কিন্তুতারপরও দিনদিন শুকিয়ে যেতে থাকে এবং গরম সহ্য করতে পারে না। যাদের ক্ষুধা খুব বেশী তারা এটি খেলে ক্ষুধা কমে আসবে। অন্যদিকে যাদের ক্ষুধা খুবই কম তারা খেলে ক্ষুধা বেড়ে যাবে। খেতে হবে নিম্নশক্তিতে (Q,৩, ৬) পাঁচ ফোটা করে রোজ তিনবার।
Alfalfa : আলফালফা ঔষধটি নিয়মিত অনেকদিন খেলে ক্ষুধা, ঘুম, ওজন, হজমশক্তি ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়। নিম্নশক্তিতে (Q) দশ ফোটা করে রোজ তিনবার করে খেতে পারেন। দ্রুত ওজন বাড়াতে চাইলে সর্বোচ্চ পঞ্চাশ-ষাট ফোটা করে খেতে পারেন। তবে কোন সমস্যা হলে কমিয়ে খাওয়া উচিত। ইহার স্বাদ যেহেতু খারাপ সেহেতু শিশুদেরকে চিনি বা গুড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।
Nux vomica : নাক্স ভমিকা ঔষধটি ক্ষুধা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী ঔষধ। যারা পরিশ্রমের কাজ কম করে কিন্তুটেনশন বেশী করে, দিনের বেশীর ভাগ সময় চেয়ারে বসে থাকে, সারা বছরই পেটের গন্ডগোল লেগেই থাকে, শীত সহ্য করতে পারে না.....এই ধরণের লোকদের ক্ষেত্রে নাক্স ভমিকা ভালো কাজ করে।
Calcarea carbonica : ক্যালকেরিয়া কার্ব নামক ঔষধটি হলো হোমিওপ্যাথিতে সবচেয়ে ভালো ভিটামিন। এটি ক্ষুধাহীনতা, অজীর্ণ, বদহজম, পেটের আলসার, ঘনঘন অসুখ-বিসুখ হওয়া, শারীরিক দুর্বলতা, স্মায়বিক দুর্বলতা, ব্রেনের দুর্বলতা, অপুষ্টি ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে পারে।
Anaemia (রক্তশূণ্যতা) :- রক্তশূণ্যতা মানে শরীরে রক্ত না থাকা নয় বরং রক্ত প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকা। পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া, ঋতুস্রাবের সাথে বেশী রক্ত যাওয়া, গর্ভধারণ, কোন মারাত্মক দুর্ঘটনা বা অসুখে রক্ত নষ্ট হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি কারণে শরীরে রক্তের পরিমাণ কমে যেতে পারে। শরীরে রক্তশূণ্যতা দেখা দিলে চেহারা মলিন-ফ্যাকাসে হয়, দুর্বলতা, ক্লান্তি, বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, ঘনঘন শ্বাস নেওয়া, জন্ডিস, হাত-পায়ে অবশ অবশ ভাব এবং সুই ফোটানো ব্যথা,মাথা ঘুরানি, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিয়ে থাকে। রক্তশূণ্যতার চিকিৎসায় ঔষধ খেতে হবে নিম্নশক্তিতে (Q,৩, ৬, ৩০) রোজ তিনবার করে অনেক দিন। ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি দুধ, ডিম, লাল গোশত, ফল-মুল, শাক-সবজি ইত্যাদি পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে।
Ferrum metallicum : ফেরাম মেট হোমিওপ্যাথিতে রক্তশূণ্যতার এক নম্বর ঔষধ। ইহার লক্ষণ হলো সাধারণভাবে মুখের রঙ থাকে ফ্যাকাসে-সাদাটে কিন্তুএকটু আবেগপ্রবন হলেই মুখের রঙ লাল হয়ে যায়। তাছাড়া হাত-পা-মুখে ফোলা ফোলা ভাব থাকে এবং অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ খাওয়ার পরে বমি করে দেয়। ইহারা সর্বদা শীতে কাঁপতে থাকে এবং সন্ধ্যার দিকে জ্বরে ভোগে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে Ferrum phosphoricum নামক ঔষধটি ফেরাম মেটের চাইতে ভালো কাজ করে থাকে। সুসলারের মতে, প্রথমে খেতে হবে Calcarea phosphorica এবং পরে খাওয়া উচিত Ferrum phosphoricum নামক ঔষধটি।
Lecithinum : ডিমের কুসুম থেকে তৈরী লিসিথিন নামক হোমিও ঔষধটি রক্তশূণ্যতার একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ। বিশেষত যাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের (Haemoglobin) মাত্রা কম থাকে। অনেক চিকিৎসা বিজ্ঞানীর মতে, এটি ব্লাড ক্যান্সার, থেলাসেমিয়া ইত্যাদি মারাত্মক রোগে দারুণ কাজ করে থাকে।
Pulsatilla pratensis : অতিরিক্ত আয়রন জাতীয় ঔষধ খাওয়ার কারণে রক্তশূণ্যতার সৃষ্টি হলে পালসেটিলা প্রযোজ্য। যে-সব মেয়েরা কথায় কথায় কেঁদে ফেলে, মুক্ত বাতাস পছন্দ, পিপাসা কম, গ্যাসট্রিক আলসার এবং মাসিকের গন্ডগোল সারা বছরই লেগে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে পালসেটিলা উপকারী।
Cinchona / China officinalis : শরীর থেকে প্রয়োজনীয় তরল পদার্থ বের হয়ে যাওয়ার কারণে রক্তশূণ্যতা দেখা দিলে চায়না খাওয়াতে হবে। যেমন কোন ভাবে শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়া, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো, দীর্ঘদিনের ডায়েরিয়া, মাত্রাতিরিক্ত যৌনকর্ম বা বীযর্পাত, মাসিকের সময় বেশী রক্তপাত ইত্যাদি ইত্যাদি। চায়নার লক্ষণ হলো মাথা ভারী ভারী লাগে, চোখের পাওয়ার কমে যায়, অল্পতেই বেহুঁশ হয়ে পড়া, কানের ভেতরে ভো ভো শব্দ হওয়া, হজমশক্তি কমে যাওয়া, পেটে প্রচুর গ্যাস হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
Chininum arsenicosum : চিনিনাম আর্স ঔষধটিও রক্তশূণ্যতা নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে বিশেষত যেখানে দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, অতিরিক্ত ঘামানো ইত্যাদি লক্ষণ বেশী থাকে। পারনিসিয়াস এনিমিয়া (pernicious anaemia) নামক বুড়ো লোকদের মারাত্মক রক্তশূণ্যতাতেও এটি মাঝে মাঝে বেশ উপকার করে থাকে।
Alfalfa : আলফালফা নামক ঔষধটি রক্তশূণ্যতায় খেতে পারেন। এটি ক্ষুধা বৃদ্ধি করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে। অপুষ্টিজনিত রক্তশূণ্যতায় একটি উৎকৃষ্ট ভিটামিন হিসাবে এটি সবাই ইচ্ছে করলে সারা জীবন খেতে পারেন। কেননা ইহার কোন ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নাই।
Aceticum Acidum : এসিটিক এসিডের রক্তশূণ্যতার লক্ষণ হলো মুখের বা ত্বকের রঙ হয় মোমের মতো চকচকে এবং প্রচুর পানি পিপাসা থাকে।
Calcarea carbonica : শিশু-কিশোর-তরুণ-যুবক-বৃদ্ধ যে-কোন বয়সের লোকদের রক্তশূণ্যতা নিরাময়ের ক্ষেত্রে ক্যালকেরিয়া কার্ব একটি দারুণ ঔষধ। শতকরা পঞ্চাশ ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে এটি আশাতীত উপকার করে থাকে। ক্যালকেরিয়া কার্বের লক্ষণ হলো এরা খুব সহজে মোটা হয়ে যায়, শরীরের চাইতে পেট মোটা থাকে, থলথলে নরম শরীর, প্রস্রাব-পায়খানা-ঘাম সব কিছু থেকে টক গন্ধ আসে, হাতের তালু মেয়েদের হাতের মতো নরম (মনে হবে হাতে কোন হাড়ই নেই), মাথা ঘামায় বেশী, মুখমন্ডল ফোলাফোলা ইত্যাদি ইত্যাদি।
Nux vomica : দীর্ঘস্থায়ী পেটের সমস্যার (বদহজম) কারণে রক্তশূণ্যতা দেখা দিলে নাক্স ভমিকা প্রযোজ্য।
Plumbum metallicum : রক্তশূণ্যতার সাথে যদি দীর্ঘ দিনের কোষ্টকাঠিন্য/শক্ত পায়খানার সমস্যা থাকে, তবে প্রথমেই প্লামবাম ঔষধটি খাওয়ার কথা চিন্তা করতে হবে। এতে এমন পেট ব্যথা থাকে, যাতে মনে হবে পেটের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে কেউ যেন সুতো দিয়ে বেঁধে পিঠের দিকে টানতেছে।
Arsenicum Album : ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড ইত্যাদি মারাত্মক রোগে ভোগার কারণে প্রচুর রক্ত নষ্ট হয়ে রক্তশূণ্যতার সৃষ্টি হলে তাতে আর্সেনিক প্রযোজ্য। আর্সেনিকের লক্ষণ হলো মারাত্মক দুর্বলতা, হাত-পায়ে পানি নামা, খুব দ্রুত শুকিয়ে যাওয়া (emaciation), বুক ধড়ফড়ানি, টক খাওয়ার আগ্রহ বেড়ে যাওয়া, পিপাসা বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি।
Picricum Acidum : রক্তশূণ্যতায় পিক্রিক এসিডের লক্ষণ হলো ভীষণ দুর্বলতা, সারা শরীরে ক্লান্তি এবং ভার ভার অনুভুত হওয়া, মেরুদন্ডের বরাবরে জ্বালাপোড়া ধরণের ব্যথা, উত্তেজিত হলে সকল কষ্ট বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি।
Helonias dioica : হেলোনিয়াস রক্তশূণ্যতা নিরাময়ে একটি ভালো ঔষধ বিশেষত সে-সব মহিলাদের জন্য যারা জরায়ু সংক্রান্ত রোগে ভোগছেন, যারা অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে কঙ্কালে পরিণত হয়েছেন। ইহার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো রোগের কথা ভাবলে রোগ বেড়ে যায় এবং রোগের কথা ভুলে থাকলে ভালো থাকে।
Aletris farinosa : এটিও মহিলাদের রক্তশূণ্যতার একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ বিশেষত উঠতি বয়সী মেয়েদের এবং গর্ভবতীদের। তাছাড়া সে-সব মহিলারা জরায়ু সংক্রান্ত কোন রোগে ভোগছেন, তাদের রক্তশূণ্যতায়ও এটি একটি ভালো ঔষধ।
Natrum muriaticum : নেট্রাম মিউর রক্তশূণ্যতার একটি ভালো ঔষধ। রোগীর চেহারা থাকে ফ্যাকাসে, ভালো খাওয়া-দাওয়া করে কিন্তুদিনদিন শুকিয়ে কঙ্কালে পরিণত হয়, ঘনঘন মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হয়, পায়খানা অধিকাংশ সময় শক্ত থাকে, মাসিকের রক্তক্ষরণ হয় খুবই অল্প, বুক ধড়ফড়ানি, মাঝে মাঝে হার্টবিট মিস হয়, মেজাজ হয় খিটখিটে, শুচিবায়ু গ্রস্ত স্বভাব।
Kali carbonicum : ক্যালি কার্বের প্রধান লক্ষণ হলো দুর্বলতা, বেশী বেশী ঘামানো এবং কোমর ব্যথা। এছাড়া চোখের ওপরের পাতা ফোলা থাকে, ঘুমের মধ্যে পায়ে টাচ করলে চমকে ওঠে, যৌনমিলনের পরে চোখে সমস্যা হয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
Kali phosphoricum : ক্যালি ফস রক্তশূণ্যতা এবং দুর্বলতার একটি অন্যতম শ্রেষ্ট ঔষধ। ইহার রোগীরা অত্যন্ত সেনসিটিভ এবং বদমেজাজী হয়ে থাকে। মাত্রাতিরিক্ত শারীরিক বা মানসিক পরিশ্রমের কারণে কঙ্কালে পরিণত হয়েছেন। তাছাড়া হঠাৎ স্পর্শ করলে চমকে ওঠে, যৌনমিলনের পরে দুর্বল হয়ে পড়ে ইত্যাদি লক্ষণও থাকে।
Bashir Mahmud Ellias
No comments:
Post a Comment