Sunday, August 27, 2017

নারীদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব (Irregular menstruation) – কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা পরামর্শ-

 
নারীদের অনিয়মিত ঋতু :-
নারীদের ১১-১৩ বছর বয়স হতে প্রতি ২৮ দিনে জরায়ুদ্বার দিয়ে সামান্য কালো লাল বর্ণের স্রাব হয়। যা ঋতুস্রাব নামে পরিচিত। সাধারণত এই স্রাব ৩ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত  বর্তমান থাকে। স্রাবের পরিমাণ এবং সময়ক্ষণ এর কোন ব্যতিক্রম হলেই তাকে অনিয়মিত ঋতুস্রাব বা Irregular Menstruation বলে বিবেচনা করা হয়।
নারীদের অনিয়মিত ঋতু স্রাবের কারণঃ-
বিভিন্ন কারণে নারীদের ঋতুস্রাব অনিয়মিত পারে, নিম্নে ঋতুস্রাব অনিয়মিত হওয়ার কারণগুলো উল্লেখ করা হলো-
  • সন্তানসম্ভবা হলে এবং সন্তান জন্মের পর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।
  • দেহের স্বাভাবিক পুষ্টির অভাব হলে।
  • জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতিতে কোন পিল ব্যবহার।
  • খাদ্যাভাসে ত্রুটি যেমনঃ ক্ষুধামন্দার কারনে মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে। আবার ওজন অতিরিক্ত কমে গেলে ও অতিরিক্ত অনুশীলনের কারণে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।
  • পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম বা পি-সি-ও-এস (PCOS) হলো একটি হরমোনজনিত ব্যাধি বা ত্রুটি। এ অবস্থায় ডিম্বাশয়ে ক্ষুদ্রাকৃতির সিস্ট দেখা দেয়। যার ফলে এ রোগে আক্রান্ত হলে মহিলাদের মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে।
  • অপরিণত অবস্থায় ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেলে একজন মহিলার দীর্ঘসময়ের জন্য মাসিক অনিয়মিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় একজন মহিলার ৪০ বছর বয়সের পূর্বেই ডিম্বাশয়ের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে।
  • পেল্ভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ বা পি-আই-ডি (PID) তে আক্রান্ত হলে মহিলাদের জননেন্দ্রিয়ে ইনফেকশন হয়, যার ফলে মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে।
  • Uterine fibroids হল জরায়ুর এক প্রকারের টিউমার। তবে এই টিউমার ক্যান্সার সৃষ্টি করে না। জরায়ুতে টিউমার হলে মাসিকের সময় অধিক রক্তপাত হয় ও মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে।
  •  দেহের হরমোন জনিত গোলযোগ বা হরমোনের অভাব।
  • দেহে রক্ত শুন্যতার ভাব থাকলে।
  • গনোরিয়া, সিফিলিস জাতীয় কঠিন প্রকৃতির রোগ থাকলে।

নারীদের অনিয়মিত ঋতুর লক্ষণ :- 
নারীদের ঋতুস্রাব অনিয়মিত হলে বেশ কিছু  লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :

  • ·       ঋতুস্রাব হঠাৎ ২/৩ মাস পর্যন্ত বন্ধ থাকে। কখনো বা ৪/৫ মাস পর্যন্ত বন্ধ থেকে হঠাৎ অধিক পরিমানে স্রাব অথবা ১০/১৫ দিন পর্যন্ত অল্প অল্প স্রাব নিঃসরণ হয়। 
  • ·         কখনও স্বাভাবিক নিয়মের চেয়ে অনেক পূর্বেই ঋতু স্রাব শুরু হয়।
  • ·         মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ (Heavy menstrual flow)
  • ·         মাসিকের সময় ব্যথা হওয়া (Painful menstruation)
  • ·         যোনী দিয়ে স্রাব নির্গত হওয়া (Vaginal discharge)
  • ·         দীর্ঘায়িত মাসিক (Long menstrual periods)
  • ·         মাংসপেশীর খিঁচুনি/টান (Cramps and spasms)
  • ·         রোগী তলপেটে (Sharp abdominal pain) ভয়fনক ব্যথা অনুভব করে। কখনো বা কালচে বর্ণের রক্তস্রাব হতে থাকে। কখনো বা স্রাবের রক্তে ছোট ছোট কালো টুকরা দেখা যায়।
  • ·         তলপেটে খিল ধরার মত ব্যথা, প্রসব বেদনার মত ব্যথা, বার বার মল ত্যাগের প্রবৃত্তি, কোষ্ঠকাঠিন্যের ভাব ইত্যাদি।
  • ·         পেল্ভিসে বা শ্রোণীচক্রে ব্যথা হওয়া (Pelvic pain)
  • ·         অনৈচ্ছিক মূত্রত্যাগ (Involuntary urination)
  • ·         মাসিকের পূর্বে শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেওয়া (Premenstrual tension or irritability)

স্বাস্থ্য পরামর্শঃ-
মা বোনদের অনেককেই এই অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়। গ্রামগঞ্জে মহিলারা বিষয়টি নিয়ে নানা প্রকার কুসংস্কারের শিকার হয়ে থাকেন এবং বছরের পর বছর প্রপার ট্রিটমেন্ট না নেয়ার কারণে ভুগতে ভুগতে শারীরিক স্বাস্থ্যকে প্র্রায় হাড্ডিসার করে তুলেন। শুধু তাই নয়, শহুরে শিক্ষিত অনেক তরুণীদেরকেও দেখা যায় বিষয়টি সম্পর্কে ভালো জ্ঞান না থাকার কারণে যথাযথ চিকিৎসা না নিয়ে রোগটি পোষে রাখে এবং একসময় এর থেকে আরো জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে বসে। হোমিওপ্যাথি চিকিত্সা বিজ্ঞানে অনিয়মিত ঋতুস্রাব নির্মূলের সম্পূর্ণ আরোগ্যকারী সমাধান রয়েছে। কিছু দিন যথাযথ হোমিও ট্রিটমেন্ট নিলে মহিলাদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব রোগ পরুপুরি দূর হয়ে আবার ঋতুস্রাব স্বাভাবিক হয়ে যায়। তাই এতে আক্রান্ত হলে কোন প্রকার সংকোচ না করে ভালো এবং অভিজ্ঞ একজন হোমিও চিকিত্সকের স্মরনাপন্ন হোন এবং প্রপার ট্রিটমেন্ট নিন, আশা করি খুব শীঘ্রই সুস্থ এবং স্বাভাবিক হয়ে উঠবেন।
বিঃদ্রঃ মাসিকের সময় সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন ও প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ পানি পান করুন। এছাড়াও রক্তপাত বেশি হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নি এবং প্রয়োজনে একজন অভিজ্ঞ এবং ভাল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নি


No comments: