Thursday, August 20, 2015

ঋতু-রোধ (Amenorrhoea) বা ঋতুস্রাবে বিলম্ব (Delayed Menstruation)

ঋতু-রোধ (Amenorrhoea) বা ঋতুস্রাবে বিলম্ব (Delayed Menstruation)

জরায়ুমধ্যে উপযুক্ত শোনিতক্ষরণের অভাব অথবা তন্মধ্যে হইতে শোনিত নিঃসরনে বাধা যে কোন কারনেই হোক যথা সময়ে ঋতু স্রাব প্রকাশ না পাইলে তাকে ঋতুরোধ বা Amenorrhoea বলে।
ঋতু-স্রাবে বিলম্ব সাধারণত দুইভাবে দেখা যায়-
১. Primary Amenorrhoea- প্রথম ঋতু-রোধ বা Primary Delayed Menstruation- প্রথম ঋতুতে বিলম্ব।
২. ‍Secondary Amenorrhoea-ঋতু চলাকালে ঋতু-রোধ বা Secondary Delayed Menstruation-ঋতু চলাকালে ঋতু বিলম্ব।

 ১. Primary Amenorrhoea- প্রথম ঋতু-রোধ বা Primary Delayed Menstruation- প্রথম ঋতুতে বিলম্বঃ সাধারণত গ্রীষ্ম প্রধান দেশে সকল নারীর ঋতু-স্রাব আরম্ভ হয় ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে। কখনো কখনো নানা কারনে মেয়েদের বয়স ১৩ থেকে ১৫ বছর পার হলেও ঋতু-স্রাব দেখা দেয় না। এ ক্ষেত্রে মেয়েদের জননেন্দ্রীয়, জরায়ু, স্তনদ্বয় প্রভৃতি অপুষ্ট থাকে এবং তাহার দৈহিক গঠন সর্বাংশে অল্প বয়স্ক বালিকাদের ন্যায় দেখায়। Primary Amenorrhoea- প্রথম ঋতু-রোধ বা Primary Delayed Menstruation- প্রথম ঋতুতে বিলম্ব হওয়ার কারণগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-
  • দেহে নারী হরমোন বা স্ত্রী জাতীয় হরমোনের অভাব। Oestrone জাতীয় হরমোন নারীর দেহে যৌবন আগমন ঘটায়। নারীর ঋতুর শুরুতে এর ক্রিয়া থাকে, তাকে আবার নিয়ন্ত্রণ করে প্রধানত- Posterior Pituitary Gland এবং এড্রেনাল গ্রন্থির নিঃসৃত হরমোন। যদি নারীর ডিম্বাশয়ে হরমোন নিঃস্বরন ঠিকমত না হয় কিম্বা অন্য দুটি গ্রন্থির নিঃসরণ কম হয় তা হলে উপযুক্ত বয়সে নারীর ডিম্বকোষ ও ডিম্ব ঠিক মত গঠিত হতে পারে না। 
  • নারীর জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের জন্মগত অপরিণতি বা ঠিকমতো বর্ধিত না হওয়া।
  • নারীর দেহে পুষ্টির অভাব এবং তার জন্য দেহের গঠন ঠিকমতো না হওয়া।
  • রক্তশূণ্যতা ও তার জন্য ঠিকমতো বয়সে ঋতু শুরু না হওয়া।
  • প্রথম ঋতু তশুরু হওয়ার আগেই যকন ডিম্বটি বা Primordial Follicle টি বর্ধিত হয়ে Graffian Follicle হয়ে ডিম্বনালীতে আসার সঙ্গে সঙ্গে, যদি ঔ নারী পুরুষ সংসর্গ করে তা হলে সে গর্ভবতী হয়ে যাবে। তার ঋতুর শুরু হবেই না আদৌ এবং তার প্রথম গর্ভ সঞ্চার হবে ঋতুর শুরুতে দেরী মনে হবে।
 লক্ষণ ঃ
  •  সাধারণত এটি হলে নারীর শরীর হবে কৃশ ও রক্তশূন্য। তার দেহ স্ত্রীজনোচিত গঠন হয় না। বক্ষ ঠিকমতো উন্নত হয় না। 
  • অনেক সময় দেহে স্পষ্ট রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
  • মাথা ভার, ব্যাথা, বুক ধড়ফড় করা, দেহের নানা দুর্বলতাজনিত কষ্ট হয়।
  • অনেক সময় চেহারাতে কৈশোরের বাব না এসে বাল্যের ভাবই বর্তমান থাকে।
  • জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের পূর্ণ স্বাভাবিক গঠন হয় না।
 ২. ‍Secondary Amenorrhoea-ঋতু চলাকালে ঋতু-রোধ বা Secondary Delayed Menstruation-ঋতু চলাকালে ঋতু বিলম্ব প্রাথমিক ঋতু-স্রাব হইবার পর অথবা একাধিকবার ঋতুস্রাব হইবার পর পুনরায় ঋতু রুদ্ধ হইলে তাহাকে ‍Secondary Amenorrhoea-ঋতু চলাকালে ঋতু-রোধ বা Secondary Delayed Menstruation-ঋতু চলাকালে ঋতু বিলম্ব বলে। গর্ভধারন এবং রজনিবৃত্তিকালে যে ঋতু-রোধ সংঘঠিত হয় তাহাও এই শ্রেণীভুক্ত তবে তাহা রোগ নয়। নানা কারণে নারীদের এমন সমস্যা সৃষ্টি হতে দেখা যায় নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ
  • দেহে হরমোনের অভাব হলে।
  • জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের অপরিনতি।
  • রক্তহীনতার জন্যও এমন হতে পারে।
  • উপযুক্ত খাদ্য ও পুষ্টির অভাব।
  • ডিম্বাশয়, ডিম্বনালী প্রভৃতি গঠনের জন্য ঠিক মতো বা সময় মতো ডিম্বর বৃদ্ধি বা জাায়ুর অসুস্থতার জন্য ঠিক সময়ে ঋতু না হওয়া।
  • জরায়ুর নানা রোগ থাকলে।

 লক্ষণ ঃ
  •  অনেক সময় দেহে রক্তশূণ্যতা দেখা দেয়।
  • দেহের গঠন কৃশকায় হয় দেহ ঠিকমতো বর্ধিত ও পুষ্ট হয় না তাদের।
  • অনেক সময় হরমোনের গোলমালে দেহ খুব স্থুলকায় হয়। কিন্তু ঋতুর গোলমাল দেখা যায়।
  • মাথাধরা, মাথা ব্যাথা, মাথা ভার প্রভৃতি লক্ষণ  দেখা দিতে পারে।
  • তলপেট ভারবোধ, শরীর অসুস্থ, গা ম্যাজ ম্যাজ করা, খুব বেশি ক্লন্তিবোধ প্রভৃতি দেখা দিতে পারে।
  • কখনো ঋতু খুব সামান্য হয়েই হঠাৎ বন্ধ হয়। কখনো দেরীতে হলেও ঋতু বেশি হয়।
  • অনেক সময় পেট, বুক ও স্তনে ব্যাথা হতে পারে।
  • অনেক সময় উরুতে ভার বোধ।
  • শ্বাস প্রশ্বাসের কষ্ট দেখা দিতে পারে।
  • মন অবসন্ন হয় ও কাজে ঠিকমতো মন বসে না।
নোট ঃ হোমিওপ্যাথিক একটি লক্ষণ ভিত্তিক সদৃশ্য বিধান চিকিৎসা। যে কোন ঔষধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে রোগীর শারিরীক, মানসিক সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যাবতীয় লক্ষণের সহিত ঔষধের লক্ষণ মিলিয়ে ঔষধ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। আপনার যে কোন ধরনের সমস্যার জন্য দয়া করে একজন ভাল হোমিওপ্যাখিক ডাক্তার এর পরামর্শ গ্রহণ করুন। কোন ঔষধই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যাতিত সেবন করা উচিত নয়।

চিকিৎসাঃ ঋতু চলা কালে বা ঋতু বন্ধ হলে আগে দেখতে হবে গর্ভ সঞ্চার হয়েছে কিনা। কোন ভাল চিকিৎসকে দ্বারা পরীক্ষা করা অবশ্য কর্তব্য। যদি তা না হয় তবে ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। পুষ্টিকর হালকা খাদ্য দিতে হবে। মাছের ঝোল, মাংসের সুপ, ভাত, ডিম সেদ্ধ, বাদাম, ভেজা ছোলা, টমেটো, পালং শাক, গাজর, কপি, ছানা, দুধ, ক্ষীর, দই প্রভৃতি খাবার দিতে হবে।

ঔষধাবলী ঃ
পালসেটিলা, সালফার, সিপিয়া, একোনাইট, ব্রায়োনিয়া, বিরেট্রাম এলবা, নেট্রাম মিউর, সাইক্লেমেন, ক্যালকেরিয়া ফস, ফেরাম ফস, লাইকোপডিয়াম, ব্যাসিলিনাম, ক্যালি আয়োড, চায়না, সিমিসিফিওগা।

No comments: